বালু লুটের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা থেকে নির্দোষ ব্যক্তিদের নাম প্রত্যাহার করুন
- আপলোড সময় : ১৯-১০-২০২৫ ০৮:১৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৫ ০৮:১৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় ৮৮ জনের নাম এসেছে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, যাদের কারণে বালু লুটের বিষয়টি দেশের মানুষের সামনে এসেছে - যারা প্রতিবাদ করেছেন, প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন, ভিডিও তুলে গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন, তাদের নামেই মামলা হয়েছে।
আন্দোলনকারী আলোকচিত্রী আলী হোসেন এই তালিকার ৩৬ নম্বর আসামি। বালু লুটের ছবি তুলে জনমত গড়ে তোলার “অপরাধে” তাকে আসামি করা হয়েছে - এমন সংবাদ শুধু হতাশাজনক নয়, ন্যায়বিচারের ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট - ভুল তথ্যের কারণে এমন হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন ভুলের দায় কে নেবে? একজন নিরপরাধ, সচেতন নাগরিকের নাম “অপরাধী”র তালিকায় তোলা মানে কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং নাগরিক অধিকার হরণও বটে।
এর চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয়- মামলায় আন্দোলনকারীদের নাম থাকলেও, যারা দীর্ঘদিন ধরে বালু লুটে জড়িত তাদের অনেকের নাম নেই বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। অর্থাৎ, প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে, আর প্রতিবাদকারীরা ভোগ করছেন হয়রানি। এটি শুধু একটি মামলার ঘটনা নয়; এটি এক ধরনের ভয় প্রদর্শন- “প্রতিবাদ করলে পরিণতি এমনই হবে।” এভাবে যদি পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে আগামীতে কেউ আর মুখ খুলবে না।
সুনামগঞ্জের নদী, হাওর, পরিবেশ - সবই টিকে আছে নাগরিক সচেতনতার ওপর। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব হলো সেই সচেতনতা উৎসাহিত করা, দমন নয়। ভুল স্বীকার করা যেমন সাহসের পরিচয়, তেমনি ভুল সংশোধন করাও জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষদের নাম প্রত্যাহার করা এবং প্রকৃত বালু লুটের হোতাদের আইনের আওতায় আনা।
আমরা আবারও বলছি- যাদুকাটা নদী শুধু বালুর উৎস নয়, এটি সুনামগঞ্জবাসীর জীবনরেখা। এই নদী বাঁচানো মানে হাওরের কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বাঁচানো। তাই নদীর লুটপাটের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে, তারা আসলে রাষ্ট্রের সহযোগী, শত্রু নয়। প্রশাসনের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বিরুদ্ধে নয়।
বালু লুটের মামলায় আন্দোলনকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, গণতন্ত্র ও পরিবেশ আন্দোলনের জন্য এক অশনিসংকেত। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে “প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলন” একদিন “নিরাপত্তার ভয়ে নীরবতার আন্দোলন”-এ পরিণত হবে - যা রাষ্ট্র ও সমাজ, দুয়ের জন্যই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। যাদুকাটা নদী বাঁচুক, সেই সাথে বাঁচুক সত্য, ন্যায় ও প্রতিবাদের অধিকার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ